রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন

মাঠ প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড রক্ষায় কঠোর সরকার

মাঠ প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড রক্ষায় কঠোর সরকার

স্বদেশ ডেস্ক:

মাঠ প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকারের প্রতিনিধি। বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ও করেন তারা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের এসব কর্মকর্তার সঙ্গে জেলা-উপজেলার পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব থাকার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের না জানিয়ে বিভিন্ন সভার আয়োজন করছে বিভিন্ন বাহিনী। এটিকে রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬ বা কার্যবিধিমালা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এমন ঘটনায় মাঠ প্রশাসনে সমন্বয়হীনতা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে সবাইকে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।

নির্বাচনসহ যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা সভা আয়োজনের ক্ষেত্রে রুলস অব বিজনেস মানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগকেই চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিটি ২৭ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও নির্বাচন কমিশনসহ মাঠ প্রশাসনের সব কর্মকর্তাকেই চিঠির কপি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬-এর তফশিল-১ (অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামং দ্য ডিফারেন্ট মিনিস্ট্রিস অ্যান্ড ডিভিশন) অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার বিভাগে, জেলাপর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ও করেন তারা। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলাপর্যায়ে ডিসি এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে সভাপতি করে আইনশৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি প্রতি মাসে সভার আয়োজন করে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিং ও সমন্বয় করে। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ সভার আয়োজনের মাধ্যমে যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ সমন্বয় করে। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ডিসিকে অবহিত না করে বিভিন্ন বাহিনী আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভা আহ্বান করছে। সেখানে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। বিষয়টি রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬-এর বিধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপন্থী। এ ধরনের সভা আহ্বানের ফলে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে যদি আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভা হয় এ বিষয়ে অবশ্যই ইউএনও-ডিসিদের জানাতে হবে। তাদের নেতৃত্বেই এসব সভা হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সার্কুলারই ঠিক। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সে অনুযায়ী যথাযথভাবে কাজ করতে হবে।

একাধিক ডিসি ও ইউএনও জানান, বর্তমানে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন চলছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক অনেক সময় সভার আয়োজন করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সভার সিদ্ধান্তগুলোও আমরা জানি না। ফলে সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটি আমাদের জন্য বিব্রতকর। কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমরা বিষয়টি প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, পুলিশ সুপাররা (এসপি) মন্ত্রণালয়ের অনেক নির্দেশনাই ঠিকমতো মানছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলায় প্রতিদিন কতটি মামলা ও জিডি হয় তার তথ্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসককে দিতে এসপিদের নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। গত ২৯ আগস্ট দেওয়া ওই নির্দেশনা নিয়ে এসপিদের মধ্যে প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। অথচ পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী, থানার প্রতিদিনের মামলা ও জিডির তথ্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসপিরা তা পাঠান না বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ডিসিরা ক্ষুব্ধ। এখন ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসনে সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে একজন এসপি বলেন, আমরা সাধারণত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ের সময় এক মাসের তথ্য একসঙ্গে দিই। কিন্তু হঠাৎ করে কেন প্রতিদিন মামলা ও জিডির তথ্য চাওয়া হচ্ছে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

কর্মকর্তারা জানান, জেলায় ডিসি-এসপির মধ্যে সমন্বয় না থাকলে প্রশাসনিক অনেক কাজেই জটিলতা দেখা দেয়। বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ক্ষুব্ধ। চেইন অব কমান্ড মানা না হলে জনগণ যথাযথ রাষ্ট্রীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু সবাই নিজেদের কৃতিত্ব নিতে চায়। ফলে তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকছে না।

কর্মকর্তাদের মিলেমিশে কাজ করতে তিনটি বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, প্রথমত শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন পর্যন্ত সব কর্মচারীকে আইনের শাসনে বিশ^াসী হতে হবে। আইনের শাসন বলতে শুধু আইনশৃঙ্খলাকেই বোঝায় না। বরং রাষ্ট্রের বিধিবিধান অনুযায়ী জনসাধারণের জন্য একটি বাসযোগ্য উন্নত রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণকেই বোঝায়। সুতরাং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন তাদের দায়িত্বের মধ্যে থেকে কাজ করে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত আমাদের সরকার একটিই। সরকারের প্রধানমন্ত্রীও একজন। সুতরাং সমগ্র সরকারব্যবস্থার স্বার্থকে সামনে রেখেই প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক কর্মচারী-কর্মকর্তাকে কাজ করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে রাষ্ট্রের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারী একে অন্যের পরিপূরক। সুতরাং এখানে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সহযোগিতার মাধ্যমেই রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেককে ‘টিম স্পিরিট’-এর ধারণা নিয়েই এগোতে হবে। ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য অন্যকে বাদ দিয়ে কিংবা অসহযোগিতা করে কোনোভাবেই এগোনো যাবে না। সব কর্মচারীর মধ্যে ‘টিম স্পিরিট’ থাকলে আর দ্বন্দ্ব থাকবে না। রাষ্ট্রের কাজও সুন্দরভাবে চলবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877